বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস পালিত
রাজধানীতে পালিত হলো বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস।প্রতি বছরের মতো এবারও দিবসটি উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ জনসচেতনতা মূলক র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেন।
বুধবার(১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জনসচেতনতামূলক র্যালিটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়েছে। এসময় অংশগ্রহণকারী সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা শিশু ক্যান্সার প্রতিরোধে ক্যান্সার সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করেন।
ক্যান্সার গবেষক ও ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটি বাংলাদেশ’র সভাপতি সৈয়দ হুমায়ুন কবির বলেন, শিশু ক্যান্সার প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা, নিয়মিত শরীর চর্চা, গর্ভাবস্থায় মায়ের অপুষ্টি, মিনারেল ঘাটতি, হতাশা, বিবাহ পূর্ববর্তী রক্ত পরীক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এসময় তিনি সমাজের সকল স্তরের মানুষকে ক্যান্সার সচেতনতায় এগিয়ে আসসার আহবান জানান।
সৈয়দ হুমায়ুন কবির বলেন, দেশে বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের মধ্যে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। শিশুদের মধ্যে কোলন ও লিভার ক্যান্সার বেশি হয়। এর অন্যতম কারণ তারা শাক-সবজি খুব কম খায়। ফাস্টফুড ও কোমল পানীয় বেশি খায়। কোমল পানীয়র মধ্যে টক্সিন নামের একটি উপাদান লিভার ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ি। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুরাও মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু অনকোলজি বিভাগে ২০১০ থেকে পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত ৪৫৫ শিশুকে ক্যান্সার আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, সঠিক ডায়াগনস্টিক করা গেলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
জানা যায়, শিশু ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০২ সালে চাইল্ড ক্যান্সার ইন্টারন্যাশনাল (সিসিআই) কর্তৃক এ দিবসটি পালন শুরু হয়। সচেতনতা সৃষ্টি ছাড়াও এ দিবসটির অন্যতম লক্ষ্য হল মৃত্যুহার হ্রাস করা, এবং ক্যান্সার সম্পর্কিত ব্যথা এবং এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা শিশুদের দুর্দশা হ্রাস করা। এ লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে ক্যান্সার নির্ণয় করা শিশুদের মধ্যে অন্তত ৬০ শতাংশ বেঁচে থাকার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরে শিশুদের জন্য আইসিসিডির থিম হলো `নো মোর পেইন` এবং `নো মোর লস`, তাদের এবং পরিবারের জন্য বেঁচে থাকা।
শিশু ক্যান্সার সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে-
১. সিসিআই অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি বছর, তিন লাখেরও বেশি শিশুর জন্মের ১৯ বছরের মধ্যে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এই শিশুদের মধ্যে প্রায় ১০ জনের ৮ জনই অল্প এবং মধ্যম আয়ের দেশে বাস করে যেখানে তাদের বেঁচে থাকার হার মাত্র ২০ শতাংশ।
২. সারা বিশ্বে প্রতি ৩ মিনিটে একটি শিশু ক্যান্সারে মারা যায়, যদিও ৮০ শতাংশেরও বেশি শিশু ক্যান্সারের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে এবং মানসম্মত যত্নের সঙ্গে পূর্ণ ও সুস্থ জীবনযাপন করতে পারে।
৩. শিশু ক্যান্সারের মধ্যে সবচেয়ে বেশির ভাগই হলো লিউকেমিয়া (শিশুদের মধ্যে সব ক্যান্সারের এক তৃতীয়াংশ লিকিমিয়া), কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের টিউমার, নিউরোব্লাস্টোমা, নেফ্রাব্লাস্টোমা, মেডেলোব্লাস্টোমা এবং রটিনোব্লাস্টোমা ধরনের।
৪. শিশু ক্যান্সারের মাত্র কয়েকটি পরিচিত ঝুঁকি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এর মধ্যে রয়েছে- গর্ভ, চিকিৎসা পরিস্থিতি, সংক্রমণের সঙ্গে সংক্রমণ, বিকিরণের সঙ্গে যোগাযোগ, পূর্ববর্তী ক্যান্সারের চিকিত্সা, ইত্যাদি।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার শাহীন,দৈনিক বঙ্গ জননী পত্রিকার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক আলী নিয়ামত, জীবন কুমার সরকার, এক্সিকিউটিভ সদস্য সুবীর কুমার বিশ্বাস,সোসাইটি এক্সিকিউটিভ সদস্য মইনুল তালুকদার,ভাইস প্রেসিডেন্ট সোলেমান খান সহ প্রমুখ।
Recent Comments